Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

আমন ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি

আমন ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি

ড. জাহাঙ্গীর আলম
করোনার অভিঘাতে কৃষির উৎপাদনে স্থবিরতা এবং রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বিপনন চেইন ভেঙে পড়ার কারণে বিশ^ব্যাপী খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। খাদ্যশস্যের সরবরাহ হ্রাস পেয়েছে এবং মূল্য বেড়েছে। তাতে খাদ্য আমদানিকারক উন্নয়নশীল দেশগুলো খুবই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অদূর ভবিষ্যতে আরও বড় খাদ্য সংকট ও দুর্ভিক্ষের পূর্বাভাস দিচ্ছে অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থা। তাতে খাদ্য ঘাটতির দেশগুলোতে মানুষের ভোগান্তি চরমে পৌঁছুতে পারে। কঠিন খাদ্যভাব দেখা দিতে পারে বাংলাদেশেও। এমনই শংকার মাঝে গত আউশ মৌসুমে বন্যার কারণে ধানের উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে। পরে দীর্ঘ খরায় বিলম্বিত হয়েছে আমনের উৎপাদন। তবে পরবর্তী লাগাতার বৃষ্টির ফলে পূরণ হয়েছে আমন চাষের প্রত্যাশা। সোনালী ধানে ভরে গেছে মাঠ। ফলনও হয়েছে ভালো। ইতোমধ্যেই ধান কাটা প্রায় শেষ হয়েছে। ধানের দামও এবার ভালো। ভিজা ধান মাঠ থেকেই সরাসরি বিক্রি হচ্ছে ১০০০ টাকা থেকে ১১০০ টাকা মণ দরে। শুকনো ধানের দাম ১২০০ থেকে ১৩০০ টাকা মণ। তাতে আমন ধান চাষ করে কৃষকরা লাভবান হয়েছেন। ধান চাষের বর্তমান মূল্যে উৎপাদনকারী কৃষকগণ বেশ খুশি। সারা দেশেই এখন কৃষির জন্য আছে সুখবর। এবার ধানে কোন রোগবালাই নেই। নেই পোকার আক্রমণ। তাই প্রতি ইউনিট জমিতে ফলন হয়েছে ভালো। অনেকেই বলেছেন বাম্পার ফলন। এ মৌসুমে ধান চাষ করে কৃষকরা লাভের মুখ দেখছেন। বুক তার অনেক আশায় ভরা। মুখে পরিতৃপ্তির হাসি। এবার আমন চাষে বেশ সন্তুষ্ট কৃষক।
ব্রাক্ষণবাড়িয়ার ঘাটিয়ারা গ্রামের কৃষক রাজিব খান। সম্ভান্ত বংশের এক শিক্ষিত যুবক। তিনি নিজের জমি চাষ করেন। অন্যের জমিও চাষ করেন বার্ষিক চুক্তিতে। তাতে আধুনিক পদ্ধতিতে ধানের চাষ করেন প্রতি মৌসুমে। এবার রোপা আমন বুনে দিয়েছিলেন ৫০ বিঘারও বেশি জমিতে। ফলন হয়েছে বিঘাপ্রতি প্রায় ১৫ মণ। শতকে প্রায় ১৮ কেজি। গত বছরের চেয়ে বিঘা প্রতি প্রায় ১ মণ ধান বেশি হয়েছে এবার। এ গ্রামে সর্বত্রই এখন ধান কাটার ব্যস্ততা। মাঠে কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার চলছে। ধান কাটা, মাড়াই ও বস্তাবন্দী করা হচ্ছে একই সঙ্গে। কোথাও বা আঁটি বেঁধে          কৃষক ধান নিয়ে যাচ্ছে বাড়ি। পদচালিত যন্ত্রের সাহায্যে চলছে এর মাড়াই। মেয়েরা সিদ্ধ করছে ধান। রোদে শুকাচ্ছে। অতঃপর ধান ভানা হচ্ছে মেশিনে। একদল যুবক বাড়ি বাড়ি গিয়ে মেশিনে ধান ভানছে। গ্রাম বাংলায় এখন এসব কাজে কায়িক শ্রমের চেয়ে যন্ত্রের প্রচলন অনেক বেশি। জমি চাষ, ফসল মাড়াই, ধান ভানা সবই হচ্ছে মেশিনে। তাতে মানুষের পরিশ্রম লাঘব হচ্ছে। সম্ভব হচ্ছে দ্রুত কাজ সম্পাদন। বাজারে এখন চালের দাম ভাল। ৫২ থেকে ৫৫ টাকা কেজি। ২১০০ থেকে ২২০০ টাকা মণ মাঝারি চাল। এখন কিছুটা নেমে এসেছে দাম। একদিকে ধানের ভালো ফলন। অন্যদিকে মূল্য আশাপ্রদ। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আধুনিক কৃষক রাজিব খান তাতে অনেক খুশি। এ খুশি ছাড়িয়ে পড়েছে দেশের উত্তরাঞ্চলে, দক্ষিণাঞ্চলে ও মধ্যাঞ্চলে। আমন ধানের লাভ তাদের আগের মূল্য ধসের কথা ভুলিয়ে দিয়েছে। সারা দেশেই এখন কৃষির জন্য, কৃষকের জন্য আছে সুখবর। পাকা ধানের গন্ধে তাদের ভরে আছে মন।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভগের তথ্য অনুযায়ী এবার রোপা আমন চাষের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ কোটি ৬৩ লক্ষ টন। উৎপাদন হবে ১ কোটি ৭০ লক্ষ টন। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৭ লক্ষ টন বেশি। আবাদি জমির সম্ভাব্য পরিমাণ ধরা হয়েছিল ৫৯ লক্ষ হেক্টর। অর্জিত হয়েছে ২৩ হাজার হেক্টর বেশি। গত বছর (২০২১-২২ অর্থবছরে) আমন ধানের আবাদ হয়েছিল ৫৭.২ লক্ষ হেক্টর। উৎপাদন হয়েছিল ১ কোটি ৫০ লক্ষ মেট্রিক টন চাল। এবার উৎপাদন ও জমির পরিমাণ দুটোই বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। মৌসুম শুরুতে দীর্ঘ খরার কারণে আমন উৎপাদনে যে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছিল পরে টানা বৃষ্টির কারণে তা কেটে গেছে। অনেকে সম্পূরক সেচ দিয়েও চাষ করেছে আমন ধান। বৈশি^ক মন্দা, খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থায় অনিশ্চয়তা এবং খাদ্যশস্যের মূল্যেবৃদ্ধি এবার আমন চাষে উদ্বুদ্ধ করেছে দেশের কৃষকদের। বাংলাদেশে রোপা ও বোনা আমন মিলে মোট চাল উৎপাদনের প্রায় ৩৮ শতাংশ সরবরাহ করে থাকে। অতএব, মোট চাল সরবরাহের ক্ষেত্রে আমনের উৎপাদন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কয়েক মাস ধরে চালের উচ্চমূল্য প্রশমনে ও সরবরাহ সংকট নিরাময়ে  চলতি আমন মৌসুমের ভালো ফলন বেশ ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। এটা দেশবাসীর জন্য সুখবর। ইতোমধ্যেই আমন চালের সংগ্রহ মূল্য নির্ধারণ করছে সরকার। এবার কেজি প্রতি আমন চালের সংগ্রহমূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৪২ টাকা। ধানের মূল্য ২৮ টাকা। এ সংগ্রহ মূল্য উৎপাদন খরচের খুবই কাছাকাছি।
ধানের উৎপাদন খরচ এবার কেজিপ্রতি ২৭.৬৪ টাকা। চাল ৪১.৫৮ টাকা। এর সঙ্গে ন্যূনপক্ষে ১০ শতাংশ লাভ যোগ করা হলে কৃষকপর্যায়ে ধানের বিক্রি মূল্য হবে প্রতি কেজি ৩০ টাকা এবং চালের ৪৫ টাকা। বিদেশ থেকে চাল আমদানি করে নিয়মিত শুল্ক পরিশোধসহ ব্যবসায়ীদের মুনাফা যোগ করা হলে প্রতি কেজি চালের দাম এমনই দাঁড়াবে। বাজারে এখন চালের দাম তার চেয়ে বেশি। সেটা কমানোর সুযোগ আছে। মানুষের বর্তমান ক্রয়ক্ষমতা বিবেচনায় এবং গরিব ভোক্তাদের স্বার্থে তা নিম্নমুখী হওয়া উচিত। সে জন্য বাজারে হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।
গত আউশ মৌসুমে আগাম বন্যার কারণে আউশের ফলন কম হয়েছিল। এবার আমনের ভালো ফলন সেই ক্ষতিপূরণ করতে সক্ষম হয়েছে। আগামী ৪ মাস দেশে খাদ্য সংকটের কোন আশঙ্কা নেই। সামনের বোরো ধান উৎপাদন ভালো হলে ২০২৩ সালের সম্ভাব্য বৈশ্বিক দুর্ভিক্ষ বাংলাদেশকে ছুতে পারবে না। কৃষি সম্প্রাসারণ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী আগামী বোরো মৌসুমে ২৬ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ বৃদ্ধি পাবে। একই সঙ্গে ব্রি ধান২৮ ও ব্রি ধান২৯ এর পরিবর্তে উচ্চফলনশীল ব্রি ধান৮৯ এবং ব্রি ধান৯২ এর চাষ সম্প্রসারিত হবে। উচ্চফলনশীল বঙ্গবন্ধু১০০ জাতের ধানের আবাদও বৃদ্ধি পাবে। তাছাড়া বাড়বে হাইব্রিড ধানের চাষ। ফলে হেক্টরপ্রতি ধানের ফলন বৃদ্ধি পাবে। মোট ৪৯ লক্ষ ৭৮ হাজার হেক্টর জমিতে সম্ভাব্য চালের উৎপাদন হবে ২ কোটি ১৫ লক্ষ টন। তাতে চালের মোট উৎপাদন দাঁড়াবে ৪ কোটি টনেরও বেশি। ফলে আগামী বছর বাংলাদেশে চালের সংকট হবে না।
বাংলাদেশ চাল উৎপাদনে বিশ্বের তৃতীয় স্থানে রয়েছে। তার পরও আমরা প্রচুর পরিমাণে চাল আমদানি করছি। এ ক্ষেত্রে আমাদের অবস্থান বিশ্বে দ্বিতীয়। এর একটা প্রধান কারণ অপচয়। এক হিসেবে দেখা যায়, প্রতি বছর ১৬ লক্ষ টন চাল অযথাই নষ্ট হয়ে যায় ক্রাশিং করার সময়। মোটা চাল মেশিনে চিকন করা এর প্রধান কারণ। মিল মালিকরা ভোক্তাদের আকৃষ্ট করার জন্য অপেক্ষকৃত মোটা চাল চিকন করে বাজারে সরবরাহ করে থাকে। তাতে অটো মেশিনে ২-৩ ছাট, ক্ষেত্র বিশেষে তারচেয়েও বেশি ছাঁটাই করে প্রস্তুত করা হয় চিকন চাল। ফলে চালের মাইক্রো নিউট্রিয়েন্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পুষ্টিমান কমে যায়। বর্তমানে বাজারে সরবরাহকৃত নাজির ও পাজাম জাতের চাল প্রধানত ব্রি ধান৪৯ এর ছাঁটাইকৃত রূপ। স্থানীয় জাতের উপস্থিতি তাতে খুবই কম। ব্রি ধান২৮ ও ব্রি ধান২৯ এবং কিছু হাইব্রিড ধান অতিরিক্ত ছাঁটাই করার মাধ্যমে তৈরি করা হয় মিনিকেট চাল। জিংক সমৃদ্ধ ব্রি ধান৬৪, ব্রি ধান৭২, ও ব্রি ধান৮৪ অতিরিক্ত ছাঁটাই করার ফলে তাতে জিংক এর পরিমাণ হ্রাস পায়। ওজনেও কমে যায়। কিন্তু এর উচ্ছিষ্ট এতোই গুঁড়ো হয়ে যায় যে তার আর কোন বিকল্প ব্যবহার সম্ভব হয় না। এ ক্ষেত্রে অজ্ঞতা, অসাবধানতা ও অসাধুতা দায়ী। আমাদের কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ কৃষকদের ও মিল মালিকদের সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এ অপচয় হ্রাসের উদ্যোগ নিতে পারে। তবে মিল মালিকদের অসাধুতা ঠেকাতে আইনের কঠিন প্রয়োগ দরকার। কিছুদিন আগে সরকারিভাবে ঘোষণা করা হয়ছিল যে ধানের নাম বস্তায় লিখে চাল বাজারজাত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ভোক্তাদের সচেতনতা কাজে আসতে পারে।
ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা গড়ার যে স্বপ্ন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেখেছিলেন তার সফল বাস্তবায়নে দৃঢ় পদে এগিয়ে যাচ্ছে বর্তমান সরকার। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ভিশন ২০৪১, এসডিজি ও ডেল্টাপ্ল্যান ২১০০ বাস্তবায়নে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও সুশীল সমাজ দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। সময়োচিত নীতি, কৌশল এবং কার্যকর কর্মকা-ের মাধ্যমেই গড়ে উঠবে নিরাপদ খাদ্য ও পুষ্টিসমৃদ্ধ বাংলাদেশ।

লেখক: কৃষি অর্থনীতিবিদ, গবেষক, শিক্ষাবিদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক উপাচার্য, ইউনিভার্সিটি অব গ্লোবাল  ভিলেজ। মোবাইল : ০১৭১৪২০৪৯১০, ই-মেইল :almj52gmail.com


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon